মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে মোট ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ডলারের দাম বাড়ার বিপরীতে কমছে টাকার মান। এর প্রভাব পড়ছে সবখাতে। বাড়ছে সরকারের উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্পের ব্যয়। পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে কিছু প্রকল্প সংশোধন করছে সরকার। কিছু প্রকল্পের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আবার ডলারের দাম বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলছে। দেশের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’। এটি সরকারের একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে এ প্রকল্পে এক ধাপে ৬ হাজার ৮৪১ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবের পাশাপাশি চলমান এ প্রকল্পের মেয়াদও আরও তিন বছর বাড়াতে চায় মন্ত্রণালয় ।
এ প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে প্রকল্পটির সঠিক ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) বৈদেশিক ঋণসহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পরবর্তীকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পের প্রথম সংশোধনের প্রশাসনিক আদেশ জারি করে। বর্তমানে প্রকল্পের কয়েকটি খাতের পরিমাণ ও ব্যয় পরিবর্তন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার মধ্যে জিওবি তিন হাজার ৫৬৯ কোটি ৮২ লাখ, জাইকার ঋণ ১৮ হাজার ১৬১ কোটি ৯৪ লাখ এবং সংস্থাটির নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে দুই হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জানুয়ারি ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বড় আকারের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত ব্যয়ের কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে ঠেকছে ২৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকায়। এ সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দরসেবা দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি টার্মিনাল থাকবে। এর একটি হবে বহুমুখী টার্মিনাল ও অন্যটি কনটেইনার টার্মিনাল। এছাড়া বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে ৮ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। প্রকল্পের মধ্যে অন্য কাজের সঙ্গে প্রায় ২৮ কিলোমিটার চার লেনবিশিষ্ট সড়ক নির্মিত হবে। এ সড়কে ১৭টি সেতু থাকবে। ১৭টি সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়িত হলে ১৯ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) বন্দরে ভিড়তে পারবে। আর তখন দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে বন্দরটি বিরাট ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ৬ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে কমিশন। সভায় প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ‘অত্যধিক’ দাবি করে উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে ওই পিইসি সভা হয়। দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে মোট ৬ হাজার ৮৪১ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে; যা কমিশনের কাছে অত্যধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়। ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবসহ প্রকল্প সংশোধনের কারণ জানতে চায় কমিশন। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা হয়। স্টাডির ভিত্তিতেই করা হয় প্রকল্পের ড্রয়িং, ডিজাইন ও ব্যয় প্রাক্কলন। কিন্তু এরপরও এত বেশি ভেরিয়েশনের বিষয়টি ‘কাক্সিক্ষত নয়’ বলে ড. এমদাদ উল্লাহ উষ্মা প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে প্রণীত ফিজিবিলিটি স্টাডিরও পুনর্মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি। ওই পিইসি সভা থেকে বলা হয়, রাজস্ব ও মূলধনী খাতের যেসব আইটেমের ব্যয় কমানো সম্ভব সেগুলোর ব্যয় কমানো যেতে পারে। রাজস্ব ও মূলধনী খাতের সব অঙ্গের ব্যয় পুনরায় পর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, আমি বিদেশে যাচ্ছি, এয়ারপোর্টে আছি। এখন কথা বলা যাবে না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি সব প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু অনেক প্রকল্পে সঠিকভাবে এটি করা হচ্ছে না। ফলে অধিক হারে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পেরও সময়-ব্যয় বাড়ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা কিছু কোয়ারি দিয়েছি। এগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। আমরা সবাই বসেই কিন্তু পিইসি সভার সিদ্ধান্ত ঠিক করি। এখানে পরিকল্পনা কমিশন একা নয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিরাও থাকেন। প্রকল্পের অস্বাভাবিক ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়া কিছু খাতের ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনতেও বলা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
* শুরুতে ব্যয় ছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা * প্রকল্পের মেয়াদও বাড়তে পারে আরও তিন বছর * ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের
মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা
- আপলোড সময় : ১৯-০৫-২০২৪ ১১:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-০৫-২০২৪ ১১:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন
মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ব্যয় হবে ২৫ হাজার কোটি টাকা
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ